‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প বিমা শিল্পে জোয়ার আনতে চলেছে, দাবি অ্যাসোচেমের সমীক্ষায়
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এদেশে যত মানুষ বাস করেন, তাঁদের মধ্যে বিমা করার প্রবণতা প্রায় নেই। পরিসংখ্যান বলছে, ২০০১ সালে এদেশে যেখানে বিমাকৃত মানুষের সংখ্যা ছিল ২.৭১ শতাংশ, তা গত বছর এসে দাঁড়ায় ৩.৭ শতাংশে। এর মধ্যে যেমন জীবন বিমা আছে, তেমনই আছে সাধারণ ও স্বাস্থ্য বিমাও। বেসরকারি সংস্থার হাতে বিমার দায়িত্ব দিয়েও সেই খরা কাটানো যায়নি ততটা, বলছে হিসেব। তবে পরিস্থিতি আশু বদলাতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছে সর্বভারতীয় বণিকসভা অ্যাসোচেম। সমাজের বড় অংশের মানুষকে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনতে কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প। আপাতত তারা ১০ কোটি পরিবারকে ওই স্কিমের আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে। বণিকসভাটি মনে করছে, শুধু এই কেন্দ্রীয় বিমা প্রকল্পের হাত ধরেই এদেশে বাড়বে বিমার বাজার। আগামী দু’বছরের মধ্যে তার অঙ্ক ২৮ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছবে বলে মনে করছে তারা। ভারতীয় মুদ্রায় তা প্রায় ১৯ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা। একটি নামজাদা মার্কেট রিসার্চ সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে সমীক্ষা চালায় বণিকসভাটি। তাতেই উঠে এসেছে এই তথ্য।
আগে গুটিকয় রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা গোটা বাজার দখলে রেখেছিল। সেই মন্দা কাটাতে কেন্দ্রীয় সরকার বিমা শিল্পে বেসরকারি পুঁজি বিনিয়োগের অনুমতি দেয়। কিন্তু তাতেও যে খুব বেশি মানুষের কাছে বিমা পৌঁছেছে, এমনটা আদৌ নয়। খুব একটা বাড়েনি জমা হওয়া প্রিমিয়ামের অঙ্কও। ২০১২ সালে মোট প্রিমিয়াম আদায়ের পরিমাণ ছিল ৩ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা। পাঁচ বছরে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে তা বেড়ে হয় পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা। যেক’টি রেসরকারি বিমা সংস্থা এদেশে আছে, তারা এখনও পর্যন্ত সাধারণ বিমা বা জেনারেল ইনসিওরেন্সে মাত্র ৪৮ শতাংশ বাজার দখল করতে পেরেছে। জীবন বিমার ক্ষেত্রে সেই হার আরও কম, মাত্র ২৯ শতাংশ।
আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে ১০ কোটি গরিব পরিবারকে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনতে চায় কেন্দ্র। প্রতিটি পরিবারকে সর্বাধিক পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমার সুযোগ দেওয়া হবে এক্ষেত্রে। এতে শুধু বিমা ক্ষেত্রে যুগান্ত আসবে তাই-ই নয়, প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে বলে দাবি করেছে তারা। হাসপাতালগুলিও তাদের ব্যবসা অনেকটাই বাড়াতে পারবে বলে আশা তাদের। প্রসঙ্গত, এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র এই প্রকল্পে ১২ হাজার কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছে।
আ্যসোচেমের করা সমীক্ষা বলছে, গত আর্থিক বছরে এদেশে জীবন বিমায় প্রথম আদায় হওয়া প্রিমিয়াম আদায়ের অঙ্ক বাড়ছে ১১ শতাংশ হারে। সাধারণ ও স্বাস্থ্য বিমায় সেই বৃদ্ধির হার ১৭.৫ শতাংশ। বিমা শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করায়, এখন পুঁজির জোগানও বেড়েছে, দাবি করেছে সমীক্ষা। তাই সার্বিকভাবে আগামী কয়েক বছরে গোটা শিল্পেই লক্ষ্মীলাভ হবে, আশা তাদের।